ফারুক আহমেদ রনি

যখনই দেখি আকাশে মেঘ জমে
মনে হয় ওই তো আমার দেশের মেঘ,
ওই তো আমার মাঠের ওপার,
ওই মেঘের নিচে সবুজ ধানক্ষেত,
সাদা বকের দল উড়ে যাচ্ছে-
এই প্রবাসে কোথাও সেরকম নেই।

-শামীম আজাদ

স্বদেশ বলতে যে আত্মার উচ্ছ্বাস- সেটা কেবল একজন প্রবাসীই বুঝতে পারেন। আমাদের প্রতিদিনের ক্লান্তি আর ব্যস্ততার মাঝে লালন করি দেশমাতৃকার অবয়ব, নস্টালজিয়ায় বিদগ্ধ সে আকুতি, আহা! আমার প্রিয় স্বদেশ। আমাদের কবিতা, গান, গল্প আর নাটক বলতে সর্বত্র জুড়ে আছে স্বদেশভাবনা আর অনুভূতি।

শামীম আজাদ কেবল প্রবাসী বাঙালির অনুভূতি প্রকাশ করেননি, বরং নতুন প্রজন্ম এবং আন্তর্জাতিক পাঠকদের জন্য বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরছেন। তিনি শুধু লেখক নন, বরং প্রবাসী বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আবেগের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
শামীম আজাদ এক অনবদ্য জীবন জীয়নের অক্সিজেনের মত। তাঁকে দেখলে মনে হয়- জীবন আসলে থমকে থাকা নয়, জীবন হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটির জন্য। জীবন বলতে- শ্বাস যতক্ষণ চলবে তোমাকে কাজ করতে হবে, কারণ জীবন খুবই সর্ট কিন্ত কাজ অনেক বেশি। এত কাজ করতে হবে, যার পরিসংখ্যান দেয়া যাবেনা। একটিই কথা কাজ করতে থাকো…।
শামীম আজাদ কবিতায় অবিসংবাদিত এক উচ্চারণ। শব্দ, ছন্দ এবং বাক্যে সাহিত্যদর্শনদীপ্ত, তিনি বিনির্মাণের অলৌকিক ক্ষমতাশালী মনীষা। পাঠককে কাছে টানার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা, ভাষার উপর তাঁর স্বতন্ত্র দখল, এবং বিচক্ষণ কাব্যশক্তির প্রতি আমি বরাবরই আসক্ত ও অনুপ্রাণিত। তাঁর সৃষ্টিশীল উপস্থিতি আমাদের কাব্যচেতনা সমৃদ্ধ করে, প্রজন্মকে সাহসী করে তোলে নিজের স্বর এবং নিজস্ব অবস্থান উচ্চারণে।

তাঁর কাব্যশক্তি, ভাষা হৃদয় ভেদ করে মস্তিষ্কে আলোড়ন তোলে, আর মস্তিষ্ক ছাপিয়ে আত্মায় জাগায় বিদ্রোহের নৈতিকতা। শব্দ তাঁর হাতে শুধু শিল্প নয়- অস্ত্র, তিনি ভাষাকে শাণিত করেন সত্য উচ্চারণের জন্য; তাঁর কবিতায় অস্বস্তি আছে, প্রশ্ন আছে, দুঃসাহস আছে- আর আছে চিন্তার শিরায় শিরায় বিদ্যুৎ চমক তোলা সৃষ্টিশক্তির প্রবল স্পন্দন।
বাংলা কবিতার ভূমিতে তিনি এক বিস্ময়-প্রতাপ- যাঁর স্পর্শে ভাষা জেগে ওঠে, চেতনা শাণিত হয়, আর পাঠক বুঝতে শেখে- কবিতা মানে কেবল সৌন্দর্য নয়, কবিতা মানে অবস্থান, প্রতিরোধ, এবং নিঃশঙ্ক উচ্চারণ।
শামীম আজাদের সৃষ্টিজীবন মানে: মৌলিক ভাষা যদি মাটি হয়, তবে সাহিত্য তার বৃক্ষ; সেই বৃক্ষের ছায়ায় প্রজন্ম আশ্রয় নেয়, আর জন্ম নেয় নতুন পাতার মতো শব্দ। বাংলা ও ইংরেজির সৃজনশীল সমন্বয়ে তিনি এক নতুন “বাংলিশ” শব্দ নির্মাণের শ্রষ্টা, যেখানে প্রবাসী জীবন, বহুসাংস্কৃতিক মানব অভিজ্ঞতা এবং দেশ–বিদেশের সেতুবন্ধন নতুন ভাষাশৈলীতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি প্রমাণ করেছেন বিশ্ব নাগরিক হওয়া মানে শিকড় ভুলে যাওয়া নয়; বরং শিকড়কে সঙ্গে নিয়েই বিশ্বদিগন্তে বিকশিত হওয়া।

আজ শামীম আজাদের জন্মদিনে স্বল্প পরিসরে হলেও লেখাটি ব্যক্তিগত আলোকে আমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসাবে তাঁকে নিয়ে এবং তাঁর কিছু কবিতা নিয়ে আলোকপাত। যার জন্য লেখাটিতে কোন ধারাবাহিকতা নেই, নেই শব্দখচিত সাহিত্যের উপস্থাপনা। যেখানে আবেগ, সেখানে দাঁড়ি, কমা-র বিচ্যুতি থেকেই যায়। কারণ আমি আবেগ নিয়েই শুরু করছি, যেমন; শামীম আপা ডাক দেন; রনি রে… কই তুই! তোরে হারিয়ে ফেললাম বুঝি..! এমন আবেগ, এমন শব্দের সমাহার কেবল মাত্র মায়ের কাছেই পাওয়া যায়। আজ মাকে মিস করি, কিন্তু শামীম আপার কথা শুনলে মন ভরে যায়, আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।
আমি শিকড়ে প্রকাশিত কবি শামীম আজাদের কিছু কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো, সাথে সাথে তাঁর সাহিত্যকর্মের মৌলিক অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
আমরা একজন শামীম আজাদকে তাঁর কর্মের ভেতর দিয়ে জানার চেষ্টা করি। বাংলা সাহিত্যের কবি, লেখক, ও নাট্যকার, যিনি দীর্ঘ প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করছেন। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং এখানকার সাহিত্যাঙ্গনে বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

শামীম আজাদের কর্ম, বাংলাভাষীদের সমাজ ব্যবস্থা ও জীবন আলেখ্যর অভিজ্ঞতাকে লালন করে তাঁর সাহিত্যের কল্প ভাবনা, শব্দ এবং ঢং বাংলিশ উচ্চারণে কবিতায় অনবদ্য শিল্পময় আবহে উপস্থাপিত হয়। তিনি সিলেটী আঞ্চলিক শব্দ, ইংরেজি শব্দ ও প্রমিত বাংলার শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছেদ্য ও অটুট সম্পর্ক এখনো বজায় রয়েছে। ব্রিটেনে সর্বাধিক জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসেবে শুধু নয় তিনি বাংলা ও ইংরেজি- দুই ভাষাতেই পরিচিত।
কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু ও শৈলীর মধ্যে তাঁর কবিতায় প্রবাসী জীবনের বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব এবং নতুন সমাজে খাপ খাইয়ে নেয়ার লড়াই ফুটে উঠে। শিকড়ের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ, যেখানে বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, মানুষ এবং ঐতিহ্য নিয়ে লেখা কবিতাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর কবিতায় মানবিক সম্পর্কের গুরুত্ব, প্রেমের সংবেদনশীলতা এবং গভীর আবেগ মূর্ত হয়ে উঠে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের কথা তাঁর কবিতায় প্রায়ই বড় একটি জায়গা দখল করে আছে, যা তাঁর দেশপ্রেমকে উপস্থাপন করে। শামীম আজাদের কবিতায় চিন্তার গভীরতা এবং অনুভূতির নিবিড়তা পাঠকদের সাথে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো বাংলাদেশের কবিতাপ্রেমীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত।

শামীম আজাদের কবিতাগুলো সাধারণত মমত্ববোধ, দেশপ্রেম, স্মৃতিমেদুরতা, এবং মানবিকতা দিয়ে আবৃত, যা তাঁকে বাংলা কবিতার জগতে একটি অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। প্রবাসী জীবনের একাকীত্ব এবং নিজের শিকড়ের প্রতি আকুলতা স্পষ্ট। কবিতায় একেবারে সাবলীলভাবে স্বাধীনতার মর্ম, আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেমের গভীরতা সহ তাঁর শৈশবের স্মৃতি এবং নস্টালজিয়ার অস্থিরতাকে উপলব্ধি করা যায় সহজেই।
প্রবাসে থাকা প্রতিটি বাঙালির জীবনের এক আলাদা বাস্তবতা। শামীম আজাদের কবিতা সেই বাস্তবতা অনন্যভাবে ফুটিয়ে তোলে। তিনি নির্মাণ করেন মুক্তচেতনার তীক্ষ্ণ উচ্চারণ, যে উচ্চারণ হৃদয়-স্পর্শ অতিক্রম করে বোধকে শাণিত করে, ভাবনাকে নতুন দিকে ঘুরিয়ে দেয়।
শব্দ তাঁর হাতে রূপ নেয় কখনো ধারালো ছুরি, কখনো আবার ভালোবাসায় সুধাবর্ষিত অমিয়ধারা; আর তাঁর উচ্চারণে জন্ম নেয় চিন্তার উদ্ভাসিত নতুন জগত। যেমন “নিশ্চিত নির্ভর” কবিতায় তিনি লিখেছেন:
“সমস্তই টলে গেছে
ঝরে গেছে কত পুরাতন প্রাণ
ঝাপসা হইয়া গেছে
শ্যাষ হয়ে গেছে
সব সোনা সোনা ধান।
তবু কী আশ্চর্য
এত সব অযুত আঘাতের পরও
কী করে রয়ে গেছে
আস্ত দ্যাশ খান!”

এই কয় কয়টি লাইনে দেখা যায় প্রবাসের একাকীত্ব, দেশের প্রতি নস্টালজিয়া এবং শিকড়ের প্রতি অবিচ্ছেদ্য আকর্ষণ। বাংলাদেশের মাঠ, নদী এবং মানুষ তাঁর কবিতায় অনন্তকাল ধরে বাঁচে। তবে প্রবাসে থাকা মানেই কেবল দূরত্ব নয়; এটি এক ধরণের মানসিক সংগ্রাম। এই শ্রাবণের পূর্ণিমায়” কবিতায় তিনি লিখেছেন:
রৌদ্রপিণ্ড সরে গেছে কখন
পায়ে পায়ে গলে গেছে আলোর আঙ্গুর।
প্রেমপন্থ বেগবান হয়ে উঠছে
বনের বাটিগুলো উপচে দিয়েছে ঘ্রাণ।
সেই কবে খসে গেছে
সন্তরণশীল হলুদ পা!
মগজে যে বীজগুলো পোঁতা ছিলো
তাতে ফলেছে অনন্ত উড়াল।”

এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে প্রবাসীর আবেগ মিলিত হয়েছে। কবিতার শব্দচয়ন এবং প্রতীকী অর্থ প্রমাণ করে শামীম আজাদ কেবল অনুভূতি প্রকাশ করেননি, তিনি সেই অনুভূতিকে জীবন্ত চিত্রে রূপান্তর করেছেন। তাঁর কবিতায় রয়েছে রূপান্তরের দ্রোহধ্বনি যা নীরবতা ভাঙতে শেখায়, স্থবির ভাবনাকে সরিয়ে দেয়, এবং পাঠকের গভীরে।

শামীম আজাদকে নিয়ে বা তাঁর পরিচিতি নিয়ে বলতে গেলে বর্তমান সময়ে শুধু বাংলা সাহিত্যে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছেন তা নয় ইংরেজি সাহিত্যেও সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসাবে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছেন, বলতে গেলে এককভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিলেতে কয়েক শত বাংলাভাষী কবি সাহিত্যিকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও বাংলাভাষায় চর্চার বাহিরে খুব অল্প সংখ্যকই আছেন যারা দ্বিভাষীয় কাজ করছেন। আমরা রীতিমত আতঙ্কিত, বিশেষ করে বিলেতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে, কারণ আগামী প্রজন্ম কতটা বাংলা ভাষা বা সাহিত্য নিয়ে কাজ করবে। বাংলা কবিতা কজন ছেলে মেয়ে পড়ছে বা পড়বে? শামীম আজাদ জানতেন আর সেই ভয়েই হাল ধরেছিলেন উভয় ভাষা নিয়ে কাজ করতে, যাতে তাদের কাছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে নিয়ে যাওয়া যায়। তাই করছেন, আমাদের প্রজন্ম শুধু নয় ইংরেজি ভাষার ভেতর দিয়ে বাংলা সাহিত্যের একটা শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। গল্পে, কবিতায়, ছন্দে অথবা নাটকের মাধ্যমে তিনি নিরলস কাজ করছেন দুই ভাষায়।
শামীম আজাদ শুধু একজন কবি বা সাহিত্যিক নন; তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং প্রবাসী বাঙালির অনুভূতির এক জীবন্ত প্রতিফলন। তাঁর কবিতা, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধে প্রায়শই দেখা যায় প্রবাসী জীবনের নস্টালজিয়া, দেশের প্রতি অন্তর্গত ভালোবাসা এবং মানবিক মূল্যবোধের গভীর ছাপ।

শামীম আজাদের কবিতায় দেশের প্রতি ভালোবাসা ও নস্টালজিয়ার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাংলাদেশের প্রকৃতি, নদী, মাঠ, মানুষ এবং ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখান। যেমন “মালিকানা” কবিতায়:
এ এমন মাটি যে মমী গলে গলে
গাজর গজায়
ভোর বেলা পায়ে বাজে ঘাসের ঘুঙ্গুর
প্রতিবেশি পালং, বাতাসের বারিতে ফাটে হর্স চেস্টনাট
ওদিকে গহনাচেরী
আর যত বাগানের ফুল
একসাথে তুলে আনে জুন ও ফাগুন।”

প্রবাসে থেকেও তিনি মাতৃভূমির সৌন্দর্য, বৃষ্টির ঘ্রাণ, ফুলের রঙ এবং গ্রামের শান্ত জীবনকে কবিতায় জীবন্তভাবে তুলে এনেছেন। তাঁর সাহিত্য পাঠককে শুধুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং মানুষের আবেগ, স্মৃতি এবং জীবনের গূঢ়তা অনুভব করায়।

শামীম আজাদ কেবল দেশের সৌন্দর্য দেখেননি; তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং সংগ্রামের কথা তাঁর কবিতায় তুলে এনেছেন। যেমন “যুদ্ধ” কবিতায়:
“যুদ্ধ মানে নিদারুণ গ্লানি ও ভয়
যুদ্ধে নেই কোনো নিরঙ্কুশ জয়
যুদ্ধ মানেই ক্ষয়, মৃত্যু ও মানুষের প্রতি সংশয়
যুদ্ধে, পক্ষ-বিপক্ষ উভয়েই
ভয়ের কাছে নিরস্ত্র, সমান ভীত
বিনা শর্তে পরাজিত।”

এখানে যুদ্ধ কেবল ইতিহাস নয়, মানুষের অনুভূতি এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন।
শামীম আজাদের কবিতার বিশেষত্ব হলো তাঁর শব্দচয়ন ও শিল্পময়তা। তিনি প্রায়শই সিলেটি আঞ্চলিক শব্দ, প্রমিত বাংলা এবং ইংরেজি শব্দ একত্রিত করে এক অনন্য রিদম তৈরি করেন।
যেমন “উপলব্ধি” কবিতায়:
“ডি ভিটামিনে ভালো করে ভিজে
হাড়গুলো পাড়ে উঠলেই
পূর্ণস্থাপনে আঠার বদলে
ঐ রোদ কাজে লাগবেই।”

শামীম আজাদ শুধু কবি নন; তিনি শিক্ষাবিদও। লন্ডনের বিভিন্ন স্কুলে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শেখান এবং প্রবাসী শিশুদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেন। এছাড়া তিনি লন্ডনে “কবিতা ও গল্পের আসর” প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মিলনস্থল।
তিনি কেবল বাংলাতেই নয়, ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সমানভাবে অবদান রেখেছেন। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসাবে তিনি দু’ভাষায় বাংলা সাহিত্যকে পরিচিত করেছেন। এটি প্রমাণ করে, শামীম আজাদ শুধু সাহিত্যিক নয়, বরং সংস্কৃতির দূত ও ইতিহাসের ধারক। বাংলা ও ইংরেজি- দুই ভাষাতেই তিনি কবিতার প্রান্তর প্রসারিত করেন শব্দের অন্তরতরঙ্গের উচ্ছ্বাসে, যেখানে কবিতা শুধু রূপ-রসের আস্বাদ নয়, বরং অবস্থান, বোধের স্বাধীনতা এবং চিন্তার নবচেতনা।
শামীম আজাদের কবিতার প্রধান থিমগুলো হলো: প্রবাসী জীবনের একাকীত্ব ও নস্টালজিয়া, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও শিকড়ের প্রতি আকর্ষণ, মানবিক অনুভূতি ও প্রেম, ইতিহাস, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধ।
প্রবাসী জীবনের নিঃসঙ্গতা “নিদ্রাকুসুম” কবিতায় ফুটে উঠেছে:
“দু’চোখে অসংখ্য ঘুমের
বীজ, চারা গজিয়েছে
রতিক্লান্ত শব্দমালা শুষেছে অগ্নি ও জল
বাহুদ্বয় বেদনা জরজর
ভরা বৈশাখ কেটে দিচ্ছে
কোমরের তাবিজ, তাগা ও হরিতকি ফল।”

এখানে দেখা যায় তাঁর কবিতায় প্রাকৃতিক চিত্র, মানবিক অনুভূতি এবং আবেগের গভীরতা একত্রে ফুটে ওঠে। শামীম আজাদ প্রমাণ করে দিয়েছেন- কবিতা শুধু পাঠ নয়, জীবনের গভীরতর উপলব্ধির এক মুক্ত অভিযাত্রা।

তাঁর কবিতা একধরনের অন্তর্জাগতিক যাত্রা, যেখানে পাঠককে শুধু দেখা নয়, অনুভব করতে বাধ্য করা হয়। ভাষা তাঁর হাতের মধ্য দিয়ে কেবল শব্দ নয়, মানসিক অভিজ্ঞতা, ইতিহাস, স্মৃতি এবং স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠে। পাঠক তাঁর কবিতায় প্রবেশ করলে যেমন ব্যক্তি ও স্থান–কালকে উপলব্ধি করে, তেমনি বোধের গভীরে এক ধীর, স্থির এবং তীব্র অন্বেষণ শুরু হয়।
“ডাকবাক্সের ঠিকানা” কবিতায় ব্যক্তিগত অভিবাসী–মানসের যাত্রা, প্রেমের স্মৃতি এবং হারানো যোগাযোগের ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলোকে তিনি অনন্য ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন।
লেখকের লেখা;
“তুমি লিখলেই,
… যে কেউ আমার ডাকবাক্স হয়ে যাবে।”

এই লাইন কেবল সম্পর্কের রূপক নয়; এটি ভাষার, চিঠির, যোগাযোগের, এবং মানুষের অন্তরঙ্গ সংযোগের হারানো রীতির পুনর্নির্মাণ। এখানকার ফর্ম—সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ, দৃষ্টি–পরিবর্তন, এবং স্তরযুক্ত ক্রমম পাঠকে তার অন্তরের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

“অদূর অতীত” কবিতায় তিনি ইতিহাস, প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নান্দনিক ও বোধগভীর ভাষায় পুনর্নির্মাণ করেছেন।
“বুটের বাড়ি খেয়েও
চিৎকার করে ওঁরা
বাংলায় কথা বলেছিলো—”
এখানে শব্দের সরলতা, কিন্তু বীভৎস বাস্তবতার উপস্থাপনা পাঠকের নাভিতে নোঙর টানার মতো। শৈলী ও ফর্ম একসাথে পাঠকের অনুভবকে স্থির করে, ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।
অন্যদিকে “পিথাগরাস ও পারিজাত” পরিবেশ, সভ্যতার ক্ষয় ও মানব-মূল্যবোধের সংকটের প্রতি পাঠককে জাগ্রত করে। “পিওর জল এখন শুধু আমাদের চোখে।”
চিত্রকল্প, ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যের ক্রম, এবং বিমূর্ত স্থান-কালের খেলা পাঠককে একই সঙ্গে বাস্তব ও অন্তর্লোকের মধ্যে ধরে রাখে।

শামীম আজাদের শৈলী এবং ফর্ম গঠনমূলকভাবে পরীক্ষামূলক। তিনি মিশ্র ন্যারেটিভ, বহুস্তরীয় চিত্রকল্প, প্রহসনময় দীর্ঘবর্ণনা এবং সুনিপুণ ছন্দ ব্যবহার করে পাঠকে কাব্যিকভাবে অনুরণিত করেন। ভাষা কখনো ধারালো, কখনো কোমল—কিন্তু সর্বদা অভ্যন্তরীণ অনুভূতি এবং দর্শনকে সরাসরি পাঠকের সঙ্গে যুক্ত করে।

তাঁর কবিতা কেবল পাঠ নয়; এটি অন্তর্মুখী যাত্রা, বোধের গভীরে নোঙর, এবং মানবিক ও নান্দনিক অন্বেষণের এক মুক্তাঙ্গন। শামীম আজাদ প্রমাণ করেছেন, কাব্য হলো স্থানান্তরিত ব্যক্তিগত অনুভব এবং সামষ্টিক স্মৃতির সংমিশ্রণ—যেখানে শব্দ, ছন্দ এবং ফর্ম পাঠককে নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দেয়, মানবিক বোধকে উদ্বাস্তু থেকে অবলম্বনে পরিণত করে।

শামীম আজাদের কবিতা পাঠকের অভিজ্ঞতাকে বহুমাত্রিক যাত্রা হিসেবে গড়ে তোলে। তাঁর লেখা কেবল শব্দের সংমিশ্রণ নয়; এটি অন্তর্জাগতিক বোধ, সামাজিক সচেতনতা, স্মৃতি, এবং অনুভূতির এক নান্দনিক উন্মেষ। তিনি প্রতিটি মুহূর্তকে দৃশ্যমান এবং অনুভবযোগ্য করে তুলেন। বাস্তবতার স্পর্শ এবং সূক্ষ্ম চিত্রকল্প তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ, “তোমারই কারনে মজুফ”-এ দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা- শীতের স্যূপ, বর্ষার ঝরনা, ট্রেনের শব্দ, কিন্তু তার বর্ণনা পাঠককে সরাসরি মানসিক অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্দৃষ্টি-র দিকে ঠেলে দেয়।
“শীত নেমে এলে,
ঊষার উষ্ণতা নিয়ে
গরম স্যূপের বাটি আমারে
জড়াইয়া ধরে।”

এখানে বাস্তবের সরল উপাদানও সুররিয়ালিজমের মাধ্যমে পাঠককে এক বিমূর্ত এবং অনুভূতিমূলক জগতে নিয়ে যায়।
আধুনিক ও পোস্টমডার্ন স্পর্শ স্পষ্ট; শহর, ট্রেন, সোশ্যাল মিডিয়া, ডোনার কার্ডের মতো উপাদানগুলি কবিতায় অন্তর্ভুক্ত। ফ্র্যাগমেন্টেড লাইন, অনিয়মিত ছন্দ, এবং বিস্তৃত বা সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ পাঠকের অভিজ্ঞতাকে Non-didactic বা অ-নির্দেশমূলক রাখে। যেমন:
“বর্ষায় বেড়াভেঙে স্বপ্নরা পালাচ্ছে,
জল ককটেলের শব্দে বেদনাও ভেঙে যাচ্ছে”
কোনো ব্যাখ্যা নেই; পাঠক নিজস্ব অনুভূতি ও প্রতিফলনে প্রবেশ করে। তাঁর সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ অত্যন্ত শক্তিশালী। “শামীম আজাদ ভনে” কবিতায় আমরা পাই:
“আপনি ততদিনই জীবিত থাকবেন
যতদিন সংখ্যালঘু একজনেরও
বাড়ি পুড়িয়ে দিলে
আপনার গায়ের মাংস-পোড়ার গন্ধে
আপনি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠবেন।”

এখানে বাস্তব অভিজ্ঞতা, আধুনিক সচেতনতা এবং অন্তর্গত অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ লক্ষ্যণীয়। কবিতা পাঠককে তার অন্তরে প্রবেশ করায়, স্বপ্ন, ইতিহাস, বর্তমানের অভিজ্ঞতা ও সামাজিক সচেতনতার সমন্বয়ে।

শামীম আজাদের কাব্যশৈলী ও ফর্মে তিনি চিত্রকল্পের বহুমাত্রিকতা, ফ্র্যাগমেন্টেড ন্যারেটিভ, Non-didactic, এসব তাঁর কবিতার উপাদেয়। একদিকে বাস্তববাদী, অন্যদিকে সুররিয়াল এবং বিমূর্ত। তাঁর লেখায় শৈশব-কৌতুহল, ব্যথা, প্রেম, সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্মুখী চিন্তা একসাথে কাজ করে। প্রতিটি কবিতা—যেমন “অতন্দ্রী,” “বৃষ্টি ও ব্যকুলতা,” “উপলব্ধি” শব্দ, ফর্ম, অনুভূতি এবং নান্দনিকতার মিলনস্থল। পাঠক শুধু পড়ে না, বরং অভ্যন্তরীণ যাত্রায় অংশগ্রহণ করে, নিজের বোধের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।

সংক্ষেপে, শামীম আজাদের কবিতা পাঠককে কেবল পাঠ করতে বাধ্য করে না; এটি অনুভব, চিন্তা এবং অন্তর্দৃষ্টির এক অভ্যন্তরীণ যাত্রা, যেখানে বাস্তব, সুররিয়ালিজম, আধুনিকতা এবং Non-didactic পাঠ একত্রে কাজ করে। এটি তাকে সমসাময়িক বাংলার কাব্যিক ভুবনে অনন্য ও অদ্বিতীয় কাব্যশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শামীম আজাদের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ জেলায়। পৈতৃক বাড়ি বৃহত্তর সিলেটের মৌলভী বাজার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন, যেখানে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আগেই বলেছি ১৯৯০ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হন এবং এখানে লেখালেখি, শিক্ষকতা, ও নানা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রবাসী বাঙালি জীবনের অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক প্রতিটি বিষয়ই তাঁর লেখনীর ক্ষেত্র।

তিনি কবিতার জন্য সুপরিচিত, এবং তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোতে প্রবাস জীবনের অনুভূতি, বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে থাকেন। তিনি মানবিক অনুভূতি, রাজনীতি, সমাজ, ও অভিবাসনের নানা দিক নিয়ে লিখে আসছেন। তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা বাংলা ও ইংরেজি মিলে প্রায় ৪০টির মত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কবিতা সংগ্রহ ১, কবিতা সংগ্রহ ২, নির্বাচিত কবিতা, শামীম আজাদের ১০০ প্রেম ও অপ্রেমের কবিতা, জিয়ল জখম, বিলেতের কথা, বংশবীজ, কইন্যা কিচ্ছা, অগ্নি ও জল, বিলেতের স্ন্যাপসট, রাণীর দেশে রঙিন বেশে, প্রিয়ংবদা, একলা জেগে রই, ওম, শূন্যস্থানে চুম্বন, মধু শিকারি ইত্যাদি।
কাব্যগ্রন্থগুলোর মত তাঁর গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস সর্বত্র প্রবাস জীবনের অনুভূতি, বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, মানবিক অনুভূতি, রাজনীতি, সমাজ, ও অভিবাসনের নানা দিক নিয়ে লিখেছেন। শামীম আজাদের বাংলা ও ইংরেজি কাব্যগ্রন্থগুলো তার লেখনশৈলীর বৈচিত্র্যময় দিকগুলো তুলে ধরতে সচেষ্ট।

শামীম আজাদ লন্ডনের বিভিন্ন স্কুলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসাবে এবং অভিবাসী শিশুদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ জাগাতে কাজ করেন। তিনি লন্ডনে “কবিতা ও গল্পের আসর” প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতির মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি ও ব্রিটিশ সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এবং তিনি সমানভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

শামীম আজাদ দেশে ও বিদেশে নানা সম্মাননার মধ্যে বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাংলা একাডেমীর পুরস্কারে ভূষিত হোন ২০২৩ সালে। সাথে সাথে তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে: কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশনের ফেলোশিপ: এই ফেলোশিপের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশে ঘুরে তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পান। চ্যানেল এস লিটারারি অ্যাওয়ার্ড, সংহতি সাহিত্য পুরস্কার ও রেইনবো পুরস্কার সহ তাঁর লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হোন। শামীম আজাদ শিকড় সাহিত্য পত্রিকা বা সংহতি পরিবারের একজন অভিভাবক। এই দুই সংগঠন শুধু না বাংলা সাহিত্য পরিষদ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র সহ যুক্তরাজ্য এমন অসংখ্য বাঙালি, অবাঙালি সংগঠনের সাথে জড়িত এবং পৃষ্টপোষতা করে আসছেন।
শামীম আজাদের একটি বিশেষ উদ্যোগ হলো “বিজয়-ফুল”, যা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্ম ও অবাঙালিদের কাছে পৌঁছে দেয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে এই কর্মসূচি ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়।

বিজয়-ফুলের মাধ্যমে তিনি প্রবাসী বাঙালিরা দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে সক্ষম হন। এই কর্মসূচিতে কবিতা পাঠ, আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে।
শামীম আজাদ কেবল একজন কবি বা সাহিত্যিক নয়; তিনি প্রবাসী বাঙালির অনুভূতির প্রতিফলন, ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক। তাঁর কবিতা, গল্প এবং বিজয়-ফুল উদ্যোগ প্রমাণ করে সাহিত্যের শক্তি কেবল শব্দের খেলাই নয়, মানবিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপনেরও এক অনন্য মাধ্যম।
শামীম আজাদের কবিতা যেমন “নিশ্চিত নির্ভর”, “মালিকানা”, “উপলব্ধি” এবং “নিদ্রাকুসুম” প্রমাণ করে, সাহিত্যের মাধ্যমে দেশের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং মানবিক মূল্যবোধ অক্ষয় রাখা সম্ভব।
শামীম আজাদ, একটি নাম, উচ্চারণেই যেন জেগে ওঠে সৃজনজগতের আলোকরশ্মি। তাঁর সাহিত্যপথ বাংলাদেশের গ্রাম থেকে লন্ডনের বহুসাংস্কৃতিক নগরী, প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বমঞ্চের বহুভাষিক পাঠক হৃদয় পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি কবি, কথাশিল্পী, গল্পনির্মাতা, শিশুতোষ স্বপ্নবুননকারী, নাট্যকণ্ঠ ও পারফরম্যান্স পোয়েট, এক অবিচ্ছেদ্য বহুমুখী শক্তি। নিজের শিকড়কে ধারণ করে বহুসংস্কৃতির আকাশে উড়তে উড়তে তিনি বাংলা ভাষাকে পরিচয়ের সীমানা ছাড়িয়ে মানবিকতার বৈশ্বিক সংলাপে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর লেখায় স্মৃতি, শিকড়, ভাষা, মানুষ এবং সময় মিলেমিশে গড়ে তোলে সৃজনের এক নক্ষত্রমণ্ডল, যেখানে সাহিত্য হয়ে ওঠে শুধু পাঠ নয়, আত্মদর্শনের উদ্ভাস।

শুভ জন্মদিন, শামীম আজাদ। আপনার সৃষ্টিশীলতা আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুক।


ফারুক আহমেদ রনি
কবি ও লেখক
সম্পাদকঃ শিকড় এবং গ্লোবাল পোয়েট এন্ড পোয়েট্রি

Leave a comment

Trending