“আমি পৃথিবীকে ছাড়িয়ে যেতে লিখি না, আমি মানুষ হতে লিখি।”
– ফারুক আহমেদ রনি
ফারুক আহমেদ রনি এমন এক কবি, যার কণ্ঠস্বর মহাদেশ অতিক্রম করে প্রতিধ্বনিত হয়। জন্মভূমির মাটি ও প্রবাসজীবনের দীর্ঘ যাত্রা তার কবিতাকে দিয়েছে গভীরতা, কোমলতা এবং স্থিতধী মনন। ১৯৬৮ সালের ২৪ মে, সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্ম নেওয়া রনি পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হন। তাঁর কবিতা গড়ে উঠেছে স্মৃতি ও প্রবাসের মাঝবর্তী সেই অন্তরভূমিতে, যেখানে মানুষ একই সাথে দুটি জায়গায় বাস করে হৃদয়ে এবং ইতিহাসে।
সিলেটের প্রকৃতি, নদীর শব্দ, বর্ষার জাদু, গ্রামবাংলার গল্প-গাথা, এসবই রনির শৈশবকে করেছে সংবেদনশীল ও পর্যবেক্ষণশীল। অল্প বয়স থেকেই তিনি অনুভব করতে শিখেছিলেন মানুষ ও সময়ের ভেতরের সূক্ষ্ম পরিবর্তন। ১৯৮০-এর দশক থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন, কবিতা, গান, গল্প, নাটক। লেখালিখি ছিল তার কাছে অন্তরের প্রয়োজন।
ফারুক আহমেদ রনি একজন সমসাময়িক কবি এবং বহুপ্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রেম, পরিচয়, স্থিতিস্থাপকতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর কবিতায় গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখা তাঁর কবিতাগুলো চিত্রকল্পের স্পষ্টতা, আবেগের গভীরতা এবং ব্যক্তিগত প্রতিফলনের সাথে বৃহত্তর সামাজিক বিষয়ে মেলবন্ধন ঘটানোর ক্ষমতার জন্য পরিচিত। তাঁর কবিতা জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব, আশা ও শক্তির মধ্যে এক অদৃশ্য সেতু নির্মাণ করে এবং মানুষের আবেগের জটিলতা অন্বেষণ করে।
আধুনিক সাহিত্যে একজন উত্থানশীল কণ্ঠস্বর হিসেবে, রনি তাঁর কবিতায় ব্যক্তিগত এবং সার্বজনীন বিষয়গুলি অন্বেষণ করেছেন। তাঁর কবিতায় প্রেম, ক্ষতি, স্থিতিস্থাপকতা এবং পরিচয়ের মতো বিষয়গুলি গভীর আবেগের সাথে আলোচিত হয়, যেখানে তিনি এমনভাবে ব্যক্তিগত অভিব্যক্তিকে সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর সাথে সংযুক্ত করতে সক্ষম। তাঁর কবিতা প্রতিফলিত করে জটিল আবেগ এবং মানব অভিজ্ঞতার কল্পনা, এবং তাঁর রচনা থেকে প্রেরণা পাওয়া যায়।
ফারুক আহমেদ রনি একজন সমসাময়িক কবি, সাহিত্যিক এবং সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব । তাঁর জন্ম ও শৈশব বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম মিলে বিভিন্ন পরিবেশে বড় হয়েছেন, যা তাঁর সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কবিতার বিষয়বস্তুতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
রনি শুধু লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাঠকদের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন, যেখানে তিনি তাঁর সাম্প্রতিক কবিতা, কবিতা নিয়ে আলোচনা এবং ভাবনা শেয়ার করেন। তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট কবিতার জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করে, যেখানে পাঠকরা তার সৃজনশীল কাজের অগ্রগতির সাথে সংযুক্ত থাকতে পারেন।
ফারুক আহমেদ রনি একজন বহুমুখী লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। কবিতার পাশাপাশি, তাঁর রচনাসমূহে প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং গদ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বৈচিত্র্য তাঁকে এমন এক নানান বিষয়ের উপর লিখতে সক্ষম করেছে যা ব্যক্তিগত এবং সার্বজনীন উভয় ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক, এবং তিনি সবসময় গভীর আবেগ এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে লেখেন। বাংলা ভাষায় তাঁর লেখাগুলো প্রায়ই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে আলোচনা করে, যেখানে ইংরেজি রচনা গুলো গ্লোবাল কনটেক্সটে অস্তিত্বের প্রশ্ন তুলে ধরে।
লেখক হিসেবে ফারুক আহমেদ রনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক: গ্লোবাল পোয়েট অ্যান্ড পোয়েট্রি (www.globalpoetandpoetry.com), একটি সাহিত্যিক পোর্টাল যা সারা বিশ্বের কবিদের সংযুক্ত করে এবং বৈশ্বিক সাহিত্যিক বিনিময়কে উত্সাহিত করে। শিকড় বাংলা সাহিত্যিক পোর্টাল (www.shikor.co.uk এবং www.shikor25th.com), যা বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রচার এবং সংরক্ষণে কাজ করে।
রনি তাঁর লেখায় সামাজিক ন্যায়ের বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর কবিতায় সমতা, যুদ্ধ এবং পরিবেশগত সমস্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে, যা তাঁকে একজন সামাজিকভাবে সচেতন শিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাঁর এই প্রতিশ্রুতি কেবল লেখনী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, তিনি সাহিত্যিক সমাজে নানা ধরনের ইভেন্ট আয়োজন, আলোচনা এবং নতুন কবিদের উৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ফারুক আহমেদ রনি কেবল কবি নন, তিনি একজন সাহিত্যিক সংগঠক, সম্পাদক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছেন। তাঁর সাহিত্যিক অবদান ছাড়াও, তিনি সাহিত্য আড্ডা এবং সৃজনশীল প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যান্য লেখকদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছেন। তাঁর সম্পাদিত সাহিত্যিক পত্রিকা এবং সাইটগুলি বিশ্বব্যাপী কবিদের মধ্যে সংযোগ এবং মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক এবং সামাজিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা: শিকড় ও সংহতি সাহিত্য পরিষদ, যা কবিতা উৎসব, সাহিত্য সম্মেলন, আলোচনা, প্রকাশনা, বইমেলা এবং নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। শিকড় গ্লোবাল পাবলিশার্স, একটি প্রকাশনা সংস্থা যা নতুন এবং প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের প্রকাশনার কাজ করে। আর্ন অ্যান্ড লিভ চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন, যা সামাজিক সমস্যা সমাধান এবং সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়কে সহায়তা করে। এই উদ্যোগগুলো রনির সাহিত্য এবং সামাজিক কার্যক্রমের প্রতি তার অঙ্গীকারের পরিচায়ক। তাঁর সম্পাদিত সংকলন এবং সম্পাদকীয় প্রকল্পগুলি বিশ্বব্যাপী একটি সাহিত্যিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কাজ করে, এবং তাঁর দানশীল উদ্যোগগুলি সমাজের ভালোবাসার জন্য তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
ফারুক আহমেদ রনি বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য (সাহিত্য) পদক-২০২৪ ,ও বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে, সাহিত্য পদক ২০১৯ পদক প্রাপ্তির মাধ্যমে সম্মানিত হোন।
কয়েকটি প্রসিদ্ধ প্রকাশনায় উঠে এসেছে: আমি এক নষ্ট যুবক (১৯৯৩/১৯৯৪), জ্বলছি অলিক অনলে (২০০৩), বিশ্মিত ফ্ল্যাশব্যাক (২০১৬), মিথিলা (২০১৬), নিষিদ্ধ আগুনে পুড়ে বিশুদ্ধ শরীর .(২০২৩)। তাঁর কবিতাচিন্তা ও তার আনুসাংগিক গঠন নিয়ে লেখা গ্রন্থ: ২০১৫ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ “কবিতা কী এবং কেন লিখি”
তাঁর কবিতাদর্শের হৃদয়।তাঁর বিশ্বাস;
- কবিতা আত্মার পবিত্রতা রক্ষার একটি পথ
- কবিতা যন্ত্রণা থেকে অর্থ জন্মানোর শিল্প
- কবিতা মানুষ থাকার শপথ
তাঁর প্রথম ইংরেজি গ্রন্থ Darkess in the Full Moon (২০১১) মাত্র ৩০ পৃষ্টার একটি কাব্যগ্রন্থ। তিনি প্রথমদিকে তাঁর বাংলা কবিতা থেকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে ভাবলেন তাঁকে অনুবাদের পাশাপাশি সরাসরি ইংরেজিতেই লিখতে হবে। আর সেই থেকে তিনি দুই ভাষায় লিখতে শুরু করেন। ফারুক আহমেদ রনির সাম্প্রতিক ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ The Soul Still Burns (২০২৫)। উক্ত গ্রন্থটি নিয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত কাব্যসমালোচক ডেভিড হেমিংওয়ে একটি অসাধারণ আলোচনা করেন।
এই প্রকাশনাগুলি রনির সাহিত্যিক শক্তির প্রমাণ, যা বাংলা এবং আন্তর্জাতিক কবিতার জগতে তাঁর প্রভাব প্রতিফলিত করে। ব্যক্তিগত, সাংস্কৃতিক এবং সার্বজনীন বিষয়গুলোকে তিনি যেভাবে উত্থাপন করেন তা তাঁর কাজকে নানা ধরনের পাঠকদের সাথে যুক্ত করে। লেখক হিসেবে তাঁর অবদান ছাড়াও, তিনি এক সময় অভিনয় শিল্পী, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণেও সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশে থাকাধীন সময়ে অল্প বয়সে তিনি একজন গীতিকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
ফারুক আহমেদ রনি তার সাহিত্যিক যাত্রায় এখনও সগৌরবপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন, এবং ভাষা এবং সাংস্কৃতিক সীমানা ছাড়িয়ে একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার তৈরির জন্য কাজ করছেন। তাঁর সাহিত্য, কর্ম এবং সামাজিক কার্যক্রম তাঁকে এমন একজন আধুনিক শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যার কাজ সারা মানবিক পরিবর্তন আনার প্রেরণা দেয়। তিনি কবিতায় মেটাফোর, চিত্রকল্প, রূপক এবং প্রতীক ব্যবহার করতে দক্ষ, যা তাঁর কবিতাগুলোকে আরও গভীর এবং বহুমাত্রিক করে তোলে। তাঁর রচনাগুলোকে বারবার পড়লে, পাঠকরা নতুন অর্থ এবং দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পান। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহিত্য জগতেও ফারুক আহমেদ রনির প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। তিনি বাংলা এবং ইংরেজি কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতা এবং প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন, যা তাকে দুটি ভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর কবিতা একদিকে যেমন ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে জড়িত, তেমনি তা সমাজ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করে।
ফারুক আহমেদ রনি শুধু একজন কবি হিসেবেই পরিচিত নন, তিনি একজন সাহিত্যিক উদ্যোগী, সম্পাদক এবং সমাজ কর্মী হিসেবে তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কবিতার মাধ্যমে তিনি সমাজের অন্ধকার দিকগুলিকে উদ্ঘাটন করেছেন এবং মানুষের জন্য বিশেষ করে প্রতিবন্ধি মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর কবিতা, প্রকাশনা এবং দাতব্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি সেই জাতি এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং অবদান রাখছেন। ফারুক আহমেদ রনির কবিতা ও সাহিত্যিক অবদান একটি বৃহত্তর লক্ষ্যের অংশ। তাঁর সাহিত্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মঞ্চ। তাঁর কবিতাগুলি পাঠকদের মধ্যে নতুন চিন্তা এবং অনুভূতির জন্ম দেয়, যা এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করে।
ফারুক আহমেদ রনির কবিতা মূলত প্রেম, অনুভূতি, পরিচয়, সামাজিক সংকট এবং মানবতার গভীরতা নিয়ে আবর্তিত। তিনি প্রকৃতি, সময়, প্রেম, ক্ষতি, সংগ্রাম, এবং আত্মপরিচয়ের মতো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত সুরুচিপূর্ণ এবং প্রগাঢ় আবেগে ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর কবিতায় মেটাফোর, রূপক এবং চিত্রকল্পের ব্যবহার অত্যন্ত প্রাধান্য পায়, যা পাঠকদের কাছে একটি গভীর অনুভূতির চিত্র তুলে ধরে। একজন কবি হিসেবে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সমস্যার প্রতি তাঁর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর কবিতাগুলি শুধু সাহিত্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মানুষের মাঝে সচেতনতা ও পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি মানবাধিকার, পরিবেশগত সমস্যা এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চেষ্টা করছেন।
১৯৮৬ সালে, মাত্র আত্র ১৯ বছর বয়সে বাবা, মা ও ভাইবোনদের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। প্রবাস শুধু পথবদল নয়, এটি অন্তর্জগতের পুনর্গঠন। এখানে স্মৃতি হয়ে ওঠে পরিচয়ের ভিত্তি। তিনি হয়ে ওঠেন প্রবাসী আত্মপরিচয়ের কবি।
বিলেতে অবস্থান করার সুবাদে, রনি বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছেন, বিশেষত ইংরেজি এবং বাংলা ভাষার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও, বিলেতের সাহিত্যে নিজেকে সপ্রতিভভাবে স্থাপন করেছেন। তাঁর কবিতা ও সাহিত্যিক কাজের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছেন এবং সে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের অঙ্গনে বাংলা ভাষার গুরুত্ব এবং ঐতিহ্যকে পুনরায় উদ্ভাসিত করেছেন। ফারুক আহমেদ রনি তাঁর সাহিত্যিক অবদানের জন্য বিলেতের সাহিত্যে যথেষ্ট সম্মান এবং প্রশংসা পেয়েছেন। তাঁর কাজ শুধু বাংলা ভাষায় সাহিত্য তৈরিতেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি একাধারে দুটি ভাষার মধ্যে সাহিত্যিক সেতু হিসেবে কাজ করেছেন, যা নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষাকে আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তাঁর অবদান শুধুমাত্র সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক মিশ্রণ এবং সাহিত্যিক সেতু হিসেবে অত্যন্ত মূল্যবান।
কবিতা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ৮০ দশকের শেষ এবং ৯০ দশকের শুরুর দিকে ফারুক আহমেদ রনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে। তিনি এই সময়ে একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন। শুধুমাত্র লেখালিখি বা পরিচালনাই নয়, তিনি মঞ্চে এবং ক্যামেরার সামনেও অভিনয় করেছেন।
এই নাট্যচর্চা ও অভিনয় অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে মানুষের অনুভূতি, নীরবতা, দৃষ্টি, বিরতি এবং সংবেদনের সূক্ষ্ম ভাষা, যা পরবর্তীতে তার কবিতাকে করেছে আরও জীবন্ত, মানবিক এবং দৃশ্যমান।
মঞ্চ তাকে শিখিয়েছে;
একটি নীরবতা কখনো শব্দের চেয়েও জোরালো,
একটি দৃষ্টি কখনো একটি বইয়ের চেয়েও গভীর, এবং গল্প তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন তা ভাগাভাগি হয় মানুষের মধ্যে।
শৈশব ও কবিচেতনার প্রথম অঙ্কুর, তিনি লিখেছেন: “আমি পৃথিবীকে ছাড়িয়ে যেতে লিখি না, আমি মানুষ হতে লিখি।”
অনন্ত রায়হান
নরওয়ে




